আমার জুপিটারে ভ্রমণ! না-না, জুপিটারে মানে বৃহস্পতি গ্রহে নয়, জুপিটার এয়ারলাইন্স-এ আমার ভ্রমণ।
সময়টা ছিল ২০০৭-০৮ এবং বাগদাদ তখনো war-zone — যদিও আমেরিকানরা ২০০৩-এ সাদ্দাম সরকারকে উপড়ে দিয়েছে এবং নতুন সরকার রাজত্ব করছে। কিন্তু পরে ইরাকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব বীভৎস মারামারি শুরু হয়। সেই কারণে কোন মান্যতাপ্রাপ্ত বিমান তখন বাগদাদে নামতো না। জুপিটার এয়ারলাইন্স বলে একটি প্রাইভেট কম্পানি চার্টার্ড প্লেন চালাতো। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা আর সেটাই ছিল একমাত্র ভরসা।
প্লেনে কোন সিট নাম্বারের ব্যাবস্থা ছিলোনা, না ছিল সময়ের ঠিক। কাজে যেতে হলে এছাড়া আর কোন উপায়ও ছিলোনা, বাধ্য হয়ে যেতে হতো। যুদ্ধে বিধ্বস্ত বাগদাদ এয়ারপোর্ট-এ না চলতো তখন A/C, না ছিল কোন খাবার জায়গা। টিকিট ইস্যু হতো বেশী তাই আগে থেকে না দাঁড়ালে প্লেনে চড়ার কোন প্রতিশ্রুতি নেই, যতোই না কনফার্মড টিকিট থাকুক হাতে। বিজনেস ক্লাস বলতে প্রথম রো−টা বোঝাতো। এয়ারপোর্টে ঢুকতে বিশাল নিরাপত্তা ব্যাবস্থা পেরিয়ে যেতে হতো – সেই গল্পটি আরেকদিন হবে।
স্থানীয় ইরাকিরা চলতো বহুত মালপত্র নিয়ে। চেষ্টা করতো যত সম্ভব সাথে কেবিনে নিয়ে যাবার।চার্টার্ড প্লেন, crewরা ছিল বেশীরভাগ পুর্ব-ইউরোপবাসী, তারা না বোঝে এদের ভাষা আর এরা না বোঝে ওদের ইংলিশ — সে এক বিচিত্র ব্যাপার! তার উপর প্লেনে সিট নাম্বার নেই। শুরু হতো বচসা। প্লেনের মধ্যে লাফালাফি। ইতিমধ্যে বাসে দ্বিতীয় ট্রিপে এসে পড়লো আরও যাত্রীগণ। এতক্ষণে প্লেনে আর মাল রাখার জায়গা নেই। এয়ারহোস্টেসরা চ্যাঁচামেচি শুরু করলো, মাল দাও কার্গোতে, প্লেনে এতো মাল নিয়ে যাওয়া নিরাপত্তার জন্য নিষেধ আর এদিকে যাত্রীরা দেবেনা — সে আরেক মিনিযুদ্ধ বলা যেতে পারে। এইদিকে সময় বয়ে যাচ্ছে। প্লেনের ভীতর প্রচণ্ড গরম! চললে A/C চালু হবে। ভাগ্যিস, ব্যাঙ্ক বিজনেস ক্লাসের টিকিট কেটে দিতো, তাই দরজার সামনে বসাতে একটু হাওয়া-বাতাস পাওয়া যেতো। ইতিমধ্যে একটা আপোষ বা সমঝোতা হয়ে গেলো, কিছু মাল গেলো কার্গোতে, আর কিছু নিয়ে ঢুকলো প্লেনে।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়। আবার আরেকটা বাস এলো, আর শুরু হোল সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এইরকম চলল আরও দুই-তিন বার। এ যেন সেই গ্রামের বাসের মতো, মনে পড়ে গেলো আমার রুরাল পোস্টিঙ্গের কথা। শেষে দরজা বন্ধ হবার সময় হলো। এবার তবে যাত্রা শুরু হবে…। এর মাঝে আবিষ্কার হলো দুই-তিন জন যাত্রীর সিট নেই। পুরো প্লেন ভরে গিয়েছে। এবার কি হবে? প্লেনের দরজা বন্ধ হচ্ছে। সে কি? একজন কর্মচারী কোথা থেকে প্লাস্টিকের স্টুল বার করে আনলো! হ্যাঁ, ঠিক ভেবেছেন, অতিরিক্ত যাত্রীদের প্লেনের মাঝখানে বসিয়ে দিলো। দুর্গা-দুর্গা! যাত্রা শুরু হলো।
সত্যি একেই বোধহয় বলে প্রকৃত এয়ারবাস! প্লেন না আকাশের বাস! না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না যে ২১তম শতাব্দীতে এরকমও হয়েছে!
Has someone else said, I wouldn’t have believed it. 😀
LikeLiked by 1 person
And এইটি নির্ভেজাল সত্য ঘটনা!
LikeLike