প্রাচীন ব্যাবিলনের শহরটিকে সম্প্রতি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী শহর ব্যাবিলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। শেষে আমরা এক শুক্রবারে গেলাম ব্যাবিলন শহরে। ইরাকে গ্রীষ্ম অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং তাপমাত্রা প্রায় 50 ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। অগ্রাহ্য করে আমরা চললাম। আমার এক সহকর্মী পরে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “কেউ কি আপনাকে বলেনি যে আপনি পাগল?” আমি তাকে জবাব দিয়েছিলাম: “এটি বলার মতো আর কেউ ছিলোনা সেখানে” 😀
ব্যাবিলন বা বাবিল শহর, যার ধ্বংসাবশেষ বর্তমান ইরাকে বাগদাদের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত, আক্কাদের সারগনের শাসনকালের পূর্বে ইউফ্রেটিস নদীর তীরে একটি ছোট বন্দর শহর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল 2334-2279 খ্রিস্টপুর্বে। ব্যাবিলনে 50 টিরও বেশি মন্দির ছিল। এটি হাম্মুরাবির শাসনাকালে প্রাচীন বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছিল। এটি হাম্মুরাবির অধীনে একটি প্রধান সামরিক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল, যিনি খ্রিস্টপূর্ব 1792 থেকে 1750 সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
বেশ কয়েক শতাব্দী পরে, রাজাদের একটি নতুন বংশ একটি নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা খ্রিস্টপূর্ব 626 থেকে 539 অবধি ছিল, যা পারস্য উপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। নব্য-ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য ছিল মধ্য প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের সময়কাল। ব্যাবিলনীয়রা রাজা নেবুচাদনেজার দ্বিতীয়র রাজত্বকালে (605-562 খ্রিস্টপূর্ব রাজত্ব করেছিলেন) পূর্বের ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের অনেকগুলি সুন্দর ও দর্শনীয় ভবন এবং মূর্তি এবং শিল্পকর্ম সংরক্ষণ করেছিলেন।
সেই প্রাচীন, ঐতিহাসিক স্থানে পৌঁছানোর আগে পথে সেনাবাহিনীর সুরক্ষাকর্মীরা আমাদের রুকে দিয়েছিল। তারা আমাদের ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আমাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে এবং রেকর্ড করে ছেড়ে দেয়। তারপরে আমরা হাইওয়েতে ঐতিহ্যময় স্থলটির গেটে পৌঁছালাম। আমাদের আবার থামানো হলো এবং আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে নিলো। সেই প্রহরী ফোন করে কাউকে ডাকল। একজন ভদ্রলোক তাঁর গাড়িতে উপস্থিত হলেন। তারা কিছু আলোচনা করে এবং আমাদের গেট থেকে সেই গাড়িকে অনুসরণ করতে বলে। আমরা বিখ্যাত ইশতার গেটের সামনে এসে থামলাম। আরও দু’জন লোক বেরিয়ে এলো। পাসপোর্টগুলি অন্য ব্যক্তির হাতে হস্তান্তর করলো । আমাদের থেকে প্রতি জন হিসেবে 25,000 দিনার (21 ডলার) প্রবেশ মূল্য নেয়। তারপরে আমাদের পাসপোর্টগুলি ফেরত দেয়। আমরা স্বস্তি বোধ করি তখন।
ইরাকী গ্রীষ্মের এই দ্বিপ্রহরে আমরা কেবল তিনজন দর্শক ছিলাম তাই বোধহয় তিনজন পাগল লোকদের পেয়ে তারা তদন্ত একটু বেশী কড়াকড়ি ভাবে করে! এটি হয়তো সাধারণ সুরক্ষা পদ্ধতি হতে পারে কিন্তু আমাদের মতো আগ্রহীদের হতাশ করতে পারেনি।